কুষ্টিয়ার মিরপুরে উপজেলা প্রশাসন ও কাকিলাদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও বাল্য বিবাহ নিরোধ সংক্রান্ত সভা এবং অভিভাবক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কাকিলাদহ মাধ্যমক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম বলেন, বাল্য বিবাহ বন্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ একটি মারাত্মক সমস্যা। বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন অনুসারে ছেলেদের বিবাহের বয়স নুন্যতম একুশ এবং মেয়েদের বয়স আঠারো হওয়া বাধ্যতামূলক। অশিক্ষা, দারিদ্র, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক নানা কুসংস্কারের কারনে বাল্য বিবাহ হয়ে আসছে। নারী শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহের কারনে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে। এছাড়া এতে গর্ভপাতের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরী হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়। বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনটি বাস্তবায়নে আমাদের সকলের ব্যাপক প্রচার/প্রচারনা করা প্রয়োজন।
অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল ইসলামের সঞ্চালনে বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা, রিজভী ইসলাম বলেন, কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য মানে হল বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে ও মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং এই সময়ের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতা। এটি তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষা, সুস্থ যৌন জীবন এবং প্রজনন ক্ষমতা সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। কিশোর বয়সে প্রজনন স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে যা প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তমান্নাজ খন্দকার বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে। বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরী হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়। বাল্যবিবাহ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না, পারিবারিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনেও সহায়ক হয়। স্বামী, সংসার, শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে বুঝে উঠার আগেই সংসার এবং পরিবারের ভারে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির থেকেও তার উপর চাপের সৃষ্টি হয়, শুরু হয় অশান্তি, পারিবারিক কলহ, এবং সর্বোপরি পারিবারিক নির্যাতন। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন হয়ে এই বাল্য বিবাহের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
অন্যদিকে প্রেসক্লাবের সভাপতি মারফত আফ্রিদী বলেন, বাল্য বিবাহ সংকুচিত করে দেয় কন্যা শিশুর পৃথিবী। আমরা যদি সবাই সচেতন হই তাহলে কন্যা শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। দেশে মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। তাই এখন থেকেই বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি সবার জায়গা থেকে এই বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে অবগত থাকি তাহলে সমাজ থেকে বাল্য বিবাহ নিরোধ করা সম্ভব হবে।